Wednesday, March 30, 2011

ডেনিম ড্রিম: লক্ষ কোটি টাকা আয়ের হাতছানি

ডেনিম ড্রিম: লক্ষ কোটি টাকা আয়ের হাতছানি

আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠা ক্যাজুয়াল জিন্স, জ্যাকেট ও নানা ডেনিমওয়্যার বিশ্ববাজারের পোষাক বিক্রির উল্লেযোগ্য অংশ। স্বাচ্চন্দ্যের সুবিস-ৃত এই বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ একটি অনিবার্য অনুষঙ্গ।

ইউরোপ আমেরিকার কোন কিশোর, তরুন বা প্রৌঢ়ের পরিহিত জিন্সটির ভেতরে নির্দিষ্ট স্থানে একটি ছোট লেবেলে মেড-ইন-বাংলাদেশ- এতো খুবই সাধারন এখন।

ডেনিমওয়্যারের পরিমানগত রপ্তানীতে চিনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। চাট্টিখানি কথা নয়- সারা বিশ্বে ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় পণ্যের দ্বিতীয বৃহত্তম উৎপাদক বাংলাদেশ!

আট হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বিশ্ববাজার ডেনিম পোষাকের, আর সেখানে বাংলাদেশের ডেনিম পোষাক রপ্তানী প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি মার্কিন ডলার।

গড়ে কম মূল্যের ডেনিম পোষাক রপ্তানী করে বলেই বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী হওয়া স্বত্বেও বিশ্ব ডেনিম বাজারে তার শেয়ার শতকরা চার শতাংশেরও কম। তুরস্ক, তিউনিশিয়া বা মেস্কিকোর মতো উন্নত ও দামি ডেনিমের ফ্যাশন জিন্স রপ্তানী করতে পারলে বর্তমান পরিমানেই আয় হতো এখনকার দ্বিগুণ। পরিমান বাড়লে আরো শত কোটি বা হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয় হতো।

এমন সপ্ন বোধহয় আর সুদূর পরাহত নয়। বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পের সামপ্রতিক সমপ্রসারণ আর মূল্য-সংযোজন প্রচেষ্টায় উঁিক দিচ্ছে এক ডেনিম ড্রিম, এক উজ্জ্বল আগামী।

মাসখানেক আগে ভারতীয় ডেনিম উৎপাদক অরবিন্দ যখন কুিমল্লা ইপিজেড একটি আধুনিক ডেনিম কারখানা স্থাপনের ঘোষণা দেয়, তখন ব্যাপারটি সবার দৃষ্টিতে আসে। ভেতরে ভেতরে স্থানীয় উৎপাদকেরাও সমপ্রসারণ আর আরো উন্নত ডেনিম তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছে।

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আছে বিশের অধিক ডেনিম কারাখানা। এর অর্ধেকেরও বেশি এখন উৎপাদন ক্ষমতা সমপ্রসারনে নেমে গেছে। আরো আধুনিক ডেনিম-ফ্যাশন ডেনিম বা প্রিমিয়াম ডেনিম- উৎপাদনের জন্য আধুনিক মেশিনারী স্থাপন করছে।

গত ৫-৭ বছরে স্থাপিত হওয়া ডেনিম কারখানাগুলো বেশিরভাগ এমনিতেই অনেকটা অগ্রসর প্রযুক্তি নিয়ে স্থাপিত। এখন আরো অগ্রসর প্রযুক্তি আসছে। দেশের বৃহত্তম পারটেক্স ডেনিম এর উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে উদ্যোক্তা। আগামী বছরেই মাসিক ৫০ লক্ষ গজ উৎপাদন ক্ষমতায় গিয়ে এটি হবে এশিয়ার বৃহৎ ডেনিম মিলগুলোর একটি।

পারটেক্স ডেনিম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বর্ধিত চাহিদার নিরিখেই প্রকল্প সমপ্রসারণ হচ্ছে। তার মতে, উৎপাদন খরচ আরো বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংকটে পড়ে চিনা রপ্তানীকারকেরা যখন বায়ারদের অর্ডার ঠিকমত দিতে পারছেন না, তখন তারা অর্ডার বাড়াতে চাচ্ছে বাংলাদেশে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানী পণ্য ডেনিমওয়্যার এর ভবিষ্যত আরো ভালো দেখেই তারা বিশাল বিনিয়োগের সাহস করেছেন। ''শুধু গ্যাস আর বিদু্যতের নিশ্চয়তা যদি দিতে পারতো সরকার আরো তবে অনেক বেশি সাহসী হওয়ার সাহস ছিলো বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের।" বললেন, রাসেল, যিনি স্বাগত জানান অরবিন্দকেও।

বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম ডেনিম উৎপাদক, অরবিন্দ এর সিইও, আমির আখতার বলেন, বাংলাদেশের ডেনিমওয়্যার উৎপাদকদের তারা ডেনিম কাপড় সরবরাহ করে আসছিলেন ভারত থেকে। স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে এবার তাদের ক্রেতাদের চাহিদা মিটবে। অরবিন্দ কুমিল্লায় তাদের কারখানার পাশে ডেনিমওয়্যার সেলাই কারখানাও করবে লিভাইস ও ডিজেল এর মতো বিখ্যাত ব্রান্ডগুলোর জন্য।

আরগন ডেনিম ও ইভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান, আনওয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, এতোদিন বাংলাদেশের পরিচিতি ছিলো শুধু কমদামী ও বেসিক ডেনিমের সস-া জিন্স ও ডেনিমওয়্যারে। দু'এক বছর ধরে ক্রেতারা কিছু দামি ফ্যাশন ডেনিম ও প্রিমিয়াম ডেনিম এর অর্ডার দিয়ে পরীক্ষা করেছেন আর সে পরীক্ষায় পাশ করেছেন আমাদের রপ্তানীকারকেরা। ক্রমশ আস্থা বাড়ছে, আরো উজ্জ্বল হচ্ছে অধিক মূল্য-সংযোজিত ডেনিমের সম্ভাবনা।

বত্রিশ বছর আগে আগে আমেরিকান এক আমদানীকারকের উদ্দেশ্যে কয়েক হাজার ডলারের এক কনসাইনমেন্ট শার্ট রপ্তানী দিয়ে শুরু হয়েছিলো বাংলাদেশের পোষাক রপ্তানীর অভিযাত্রা। শার্ট দিয়ে শুরু হলেও কয়েক বছর পরেই বটমস বা ট্রাউজার হয়ে উঠে শীর্ষপণ্য। বিগত অর্থবছরে তৈরী পোষাক শিল্পই এনেছে মোট রপ্তানী আয়ের প্রায় আটাত্তর শতাংশ- সাড়ে বারোশ' কোটি মার্কিন ডলার বা সাতাশি হাজার কোটি টাকা। এখন ডেনিম শিল্পের অভিযাত্রা সফল হলে এ দশকেই বাৎসরিক লাখ কোটি টাকা আয় হতে পারে শুধু ডেনিমওয়্যার দিয়েই।
গ্যাস-বিদু্যত হলে লাখ কোটি টাকার ডেনিমওয়ার রপ্তানী আয় নিশ্চিত করা আকাশ কুসুম কিছু নয়। বিজিএইএ প্রেসিডেন্ট ও এনভয় ডেনিমের এমডি আব্দুস সালাম মুর্শেদীও ডেনিম ড্রিম এর সওয়ার। তার মতে ''বাংলাদেশী সাপ্লায়ার্স ক্যান ডু" এই আস্থা এখন বিশ্বজুড়ে। এই আস্থা অর্জন করেছে আমাদের শ্রমিক আর উদ্যোক্তারাই।

Friday, March 11, 2011

Garments is Bangladesh

Garments Business is largest trade of Bangladesh. Throw this business Bangladesh earn 67% national income. This is only one business where do work large number of woman labour. Gas problem is a big threat of this business. Due to out-force influence destructive labour movement is one of big problem of this business. These problem is not unsolvable. Any one can say about this here, Please.

Friday, February 11, 2011

তৈরি পোশাকের নতুন বাজার অর্থনীতির জন্য শুভসূচক

তৈরি পোশাকের নতুন বাজার অর্থনীতির জন্য শুভসূচক
০০ অর্কপ্রভ দেব

বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে রফতানির মাধ্যমে ১,০২৬ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি আয় হয়েছিল প্রায় ৭২৮ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ৪১ শতাংশ। গত বছর বিশ্বের মাত্র ১২টি দেশ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। গত বছর বিশ্ব রফতানিতে ১২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ৪১ শতাংশ ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বরাবরের মতো গত ছয় মাসেও রফতানি আয়ের সিংহভাগ এসেছে তৈরি পোশাক খাত তথা নিট ও ওভেন পোশাক রফতানি থেকে। বিশ্বব্যাপী যখন অর্থনৈতিক মন্দার লো হাওয়া বইছে, বিশ্ব প্রবৃদ্ধি যখন নিম্নমুখী, বিশ্বের আমদানি-রফতানির পরিমাণ যখন কমছে, খাদ্যপণ্য, জ্বালানি তেলসহ জিনিসপত্রের দাম যখন বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ায় অনেক স্বল্পোন্নত দেশ যখন চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য আমদানির সাহস করছে না তখন বাংলাদেশ স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। একটা স্বল্পোন্নত দেশের জন্য এ এক বিরল অর্জন। এর ফলে চলতি অর্থবছর দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ হবে বলে অর্থনৈতিক বিশেস্নষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও বেশ স্থিতিশীল। বিশ্বে একমাত্র চীন ও ভারতই এর চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০১০ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি ১০.৩ শতাংশ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধি ৯.৪ শতাংশ। তারপরও চীন ও ভারতের রফতানি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে। মাত্র সাত হাজার মার্কিন ডলার রফতানি হয়েছিল সে বছর। সাহসী উদ্যোক্তা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পরবর্তী দেড় দশকে খাতটির তেমন অগ্রগতি হয়নি। ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে আয় হয়েছে মাত্র ৬২ কোটি ডলার। ইতোমধ্যে প্রথম প্রজন্মের একদল নবীন উদ্যোক্তা এ খাতে বিনিয়োগ শুরু করে। ফলে পরবর্তী পাঁচ বছরে রফতানি আয় কয়েক গুণ বাড়ে। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি আয় ২২৩ কোটিতে উন্নীত হয়। তারপর থেকে এ খাতকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। যদিও ১৯৯৩-৯৫ সময়ে জিএসপি জালিয়াতির কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জিএসপি সুবিধা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। ১৯৯৬'র সরকার এর শান্তিপূর্ণ সমাধান করে। তারপর থেকে প্রতি বছর ২০ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে তৈরি পোশাক রফতানি। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ১,২৫০ কোটি ডলার। চলতি ২০১০-১১ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে তৈরি পোশাক খাতে আয় হয়েছে ৭৯৫ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৫৫৯ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪২.২ শতাংশ। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ১৯৯০'র দশক পর্যন্ত গার্মেন্টস খাতের আয়ের সিংহভাগ আসতো ওভেন পোষাক তথা শার্ট, ট্রাউজার, সু্যয়েটার প্রভৃতি থেকে। ১৮৯৭-৯৮ অর্থবছর থেকে নিট পোশাক তথা টি-শার্ট, আন্ডারগার্মেন্টস প্রভৃতি থেকে আয় বাড়তে থাকে। এক সময় এ আয় ওভেন পোশাকের আয়কে ছাড়িয়ে যায়। গত অর্থবছরে নিট পোশাক থেকে আয় হয়েছে ৪৩১ কোটি ডলারের বেশি। আর ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৩৬৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে নিট পোশাক থেকে এসেছে ৪৩১ কোটি ডলার। আর ওভেন পোশাক থেকে এসেছে প্রায় ৩৬৪ কোটি ডলার। নিট পোশাক তৈরিতে দেশীয় মূল্য সংযোজনের হার ওভেনের তুলনায় বেশি। তাই নিট পোশাক রফতানি বৃদ্ধি মানে দেশের অর্থনীতির জন্য আরো শুভসূচক।
১৯৯০'র দশকে রফতানির বিপরীতে সরকারের ক্যাশ ইনসেনটিভ প্রদান এবং পরবর্তীতে সরকারের বিভিন্ন নীতি ও আর্থিক প্রণোদনা, দেশীয় উদ্যোক্তাদের সাহসী উদ্যোগ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডবিস্নউটিও), ইইউসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রফতানির পক্ষে নীতি প্রণয়নে সরকারের সফল দরকষাকষি সবকিছুই বাংলাদেশের পক্ষে গেছে। ২০০৫ সাল থেকে ইইউতে জিএসপি প্রথা চলে যাবে, বাংলাদেশ কম শুল্কে রফতানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে, এতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমে যাবে এমন আশঙ্কাও পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ২০০৮ সালে মন্দা দেখা দেয়ার পর তৈরি পোশাক রফতানি কমে যাবে এমনটাও অনেকে আশঙ্কা করেছিল। অবশ্য এ আশঙ্কা অমূলক ছিল না। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির প্রায় ৯৪ শতাংশ হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউভুক্ত দেশগুলোতে। আর মন্দার প্রভাবও এ সব দেশেই বেশি। বাস্তবে বিপরীত ফলই এসেছে। দেশের প্রায় পাঁচ হাজার গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক যাদের প্রায় ৯০ শতাংশই নারী তাদের জন্য এটি একটি বড় পাওয়া। এটি সরকারের জন্য স্বস্তির। আর পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের জন্য হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মতো অবস্থা। বাংলাদেশের পোশাক এখন বিশ্ববাজারে সমাদৃত। ইইউতে কোনো কোনো ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে প্রথম বা দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। ডবিস্নউটিও'র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বের দুই নম্বর গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশ। চীনের সাথে বাংলাদেশের পার্থক্য অনেক বেশি হলেও শ্রমের মজুরিসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক তুলনামূলকভাবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে চীনের চেয়ে ভাল অবস্থায় আছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের প্রধান রফতানি বাজার। এ সব দেশে ২০০৮ সাল থেকে মন্দা অব্যাহত থাকায় সহজেই ধরে নেয়া হয়েছিল বাংলাদেশের রফতানি কমবে। মন্দার কারণে সেসব দেশে চাহিদা কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশের রফতানি কমেনি। ২০০৯ সালে রফতানিসহ বাংলাদেশের রফতানি বাজারগুলোতে দামি পোশাকের চাহিদা কমেছে। তাই চীন, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে। জনগণের জীবনমান বৃদ্ধির ফলে এ সব দেশে শ্রমের মজুরি বেড়ে গেছে। তাই তারা বেশি মূল্য সংযোজিত পোশাক যেমন জ্যাকেট, বেস্নজার, সুু্যট প্রভৃতি উৎপাদনে মন দেয়। শার্ট. টি-শার্ট, ট্রাউজার, আন্ডারগার্মেন্টস ইত্যাদিতে শ্রমিকের মজুরি দিয়ে তেমন লাভ হয় না দেখে গত ৫/৭ বছরে তারা এ সব পোশাক উৎপাদন এক রকম ছেড়েই দিয়েছে। মন্দার কারণে উন্নত দেশের ভোক্তারা এখন দামি পোশাকের পরিবর্তে সস্তা পোশাক কিনছে। তাই বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, লাউস, আফ্রিকার কয়েকটি তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশের এখন পোয়াবারো। বাংলাদেশের গার্মেন্টস উৎপাদন ক্ষেত্রটি বড় বিধায় রফতানি বেশি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর মন্দা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণের পদক্ষেপগুলো থেকে কিছু কিছু ফল আসলেও এখনো বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তারপরও এ খাতের বিশ্ববাজারের মাত্র তিন শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। রফতানি বাড়ানোর বহু সুযোগ এখনো আছে। যুক্তরাষ্ট্র ২০০০ সাল থেকে আফ্রিকান গ্রোথ এন্ড অপোরচুনিটি আ্যাক্ট, ২০০০ অনুযায়ী আফ্রিকার প্রায় ৪০টি দেশকে এবং ক্যারিবিয়ান বেসিন ইকোনোমিক রিকোভেরি অ্যাক্ট ১৯৮৩ এর আওতায় প্রায় ২০টি ক্যারিবীয় দেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিচ্ছে। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ২০০৬ সালে ক্যারিবীয় দেশগুলো থেকে ২,৫০০ কোটি ডলার এবং আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ৩,৬০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। যার মধ্যে তৈরি পোশাকও আছে। এর ফলে এ দুটি অঞ্চলের অনেক দেশ তৈরি পোশাক রফতানি বাজারে জোরালোভাবে আসতে শুরু করেছে। এ সব দেশ উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের বাজারেও প্রবেশ করছে। বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায়নি। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশকে অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দিনে দিনে এ প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং তা গোটা অঞ্চলেই বিস্তৃত হবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত রফতানি সুবিধা আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার সৃজনের দুর্বার চেষ্টা চালাতে হবে।

সার্ক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভারত বাংলাদেশকে কিছু শর্তসাপেক্ষে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা দেয়ার কথা। বহু আলোচনার পর ভারত ২০০৮ সাল থেকে বছরে ৮০ লাখ পিস তৈরি পোশাক শুল্কমুক্ত আমদানির কোটা বেঁধে দেয়। ভারতের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য বাংলাদেশ ২০০৮ ও ২০০৯ সালে নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে পারেনি। ২০০৮ সালে নির্ধারিত কোটার ২৩ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ৩৭ শতাংশ পোশাক রফতানি করতে সমর্থ হয়েছে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ফলে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে বড় বড় সাফল্য অর্জনের পাশাপাশি কোটা অনুযায়ী তৈরি পোশাক রফতানির জটও খুলেছে। ২০১০ সালের পুরো কোটা অক্টোবর মাসের মধ্যেই রফতানি করা হয়েছে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কোটা নির্ধারণী আলোচনার সময় ভারত সম্মত হয়েছিল যে, বাংলাদেশ কোটা পূরণ করতে পারলে পর্যায়ক্রমে কোটা বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়া হবে। এ অঙ্গীকার পূরণের জন্য দ্রুত আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। ভারতে এখন ২,৮০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাকের বাজার আছে এবং প্রতি বছর এ চাহিদা ১৮ শতাংশ করে বাড়ছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের সাথে সাথে তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ানোর পথও সুগম হতে পারে। দেশভিত্তিক রফতানি তথ্য বিশেস্নষণ করলে দেখা যায়, রফতানি বাজার সম্প্রসারণের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, সংযুক্ত আরব আমীরাত, হংকং এবং ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিল ও চিলিতে উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে।
সারণী অনুযায়ী প্রতিটি দেশেই রফতানি প্রতি বছর বাড়ছে। কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো প্রত্যেকেরই বাজার চাহিদা বেশি এবং প্রতি বছরই তা বাড়ছে। এ সব দেশে ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ প্রচুর রফতানি করছে। আমাদের দরকার এ সব দেশের বাজার চাহিদা অনুধাবন করা। আমদানিকারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করা। তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলা। তাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক তৈরি করা। এ জন্য রফতানিকারকদের তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। এ সব দেশে ঘন ঘন প্রতিনিধিদল পাঠাতে হবে। আলোচনা-দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমদানিকারক তথা ভোক্তার চাহিদাকে মূল্য দিতে হবে। তাদের চাহিদামতো উৎপাদন করতে হবে। তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারকদের বাজার সম্প্রসারণ প্রচেষ্টায় সরকারের উৎসাহ প্রদান প্রক্রিয়া আরো কার্যকর করতে হবে। মিশনগুলোকে আরো বাণিজ্য-বান্ধব করে তুলতে হবে। তবেই তৈরি পোশাক রফতানি বাজার সম্প্রসারণের যে নবদুয়ার উন্মোচিত হয়েছে তা আরো বিস্তৃত ও চওড়া করা সম্ভব হবে। শ্রমঘন এ খাতটির প্রসার টেকসই করার জন্য অগ্র-পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পে স্বয়ংস্পূর্ণ হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণসহ একটি জাতীয় পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। মনে রাখতে হবে, তৈরি পোশাক খাতের ওপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

রফতানি আয় (কোটি ডলারে)

দেশ ২০০৬-০৭ ২০০৭-০৮ ২০০৮-০৯ ২০০৯-১০
কানাডা ৪০.৮৬ ৪৬.৭৮ ৫৮.৭০ ৫৯.৫৫
জাপান ২.০৯ ২.৮০ ৭.৪৪ ১৭.৩৩
অস্ট্রেলিয়া ১.০৪ ২.১৯ ৪.৯৩ ৮.৫৬
মেক্সিকো ৪.৬৭ ৬.০৫ ৮.১৯ ৬.১৪
ব্রাজিল ০.৫০ ১.৬৪ ৩.৯৬ ৪.৫২
আরব আমীরাত ০.৭২ ১.৫০ ২.৭৬ ৩.৪৫
হংকং ১.৪০ ১.৯৭ ২.৩০ ২.৫৭
ভারত ০.২৮ ০.৫০ ১.০৯ ১.২৫

Some Subject (Many post in one subject):

Saturday, January 22, 2011

গার্মেন্টনির্ভর সময়োপযোগী পেশা

গাইডগার্মেন্টনির্ভর সময়োপযোগী পেশা
চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা আর ভবিষ্যৎ গড়তে সিদ্ধান্তহীনতা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বেশিরভাগ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের। চাকরির এই অপ্রতুলতার কারণে যেখানে নিজেকে টিকিয়ে রাখা মূল লক্ষ্য, সেখানে শুধু একাডেমিক পড়াশোনা করে আগামীর সুন্দর স্বপি্নল ক্যারিয়ার গড়ার সময় এখন আর নেই। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি সচেতন। সবার কাছে এখন সময়ের দাবি তার ক্যারিয়ারটা যেন আধুনিক ও স্মার্ট হয়। তাই সাধারণ একাডেমিক ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়ে এসে চলমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৃজনশীল ক্রিয়েটিভ ডিগ্রি নেওয়ার জন্য ঝুঁকছেন অনেকেই। ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে যে কেউ এখন গড়তে পারেন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। গার্মেন্ট শিল্পের সময়োপযোগী ও চাহিদাসম্পন্ন পেশার ওপর লক্ষ্য রেখে কিছু যুগোপযোগী বিষয় চালু করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি (এনআইএফটি)। যাদের রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মালয়েশিয়ার লিমককউং ইউনিভার্সিটির অ্যাপিলিয়েশন। এদের অধীনে এনআইএফটির পরিচালনা করছেন ফ্যাশন ডিজাইনে-এমবিএ ইন অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং, বিএসসি অনার্স ইন অ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এমএমটি), নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (কেএমটি), ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি (এফডিটি), ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড টেকনোলজি জি (এফএমটি) কোর্স। এই কোর্সগুলোতে এনআইএফটিতে ১ বছর পড়াশোনা করে লিমককউং ইউনিভার্সিটির সারা বিশ্বের ১৪৫টি ক্যাম্পাসের যেকোনো একটিতে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এসব কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা এসএসসি ও এইচএসসি অথবা সমমান ২.০০ উত্তীর্ণ প্রার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়া এনআইএফটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এনআইইটি)-তে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক ৪ বছর মেয়াদি ৮ সেমিস্টারে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স রয়েছে। এছাড়া এনআইএফটিতে ফ্যাশন ডিজাইনে রয়েছে বিভিন্ন ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স। এনআইএফটি, ঢাকা। ফোন : ০১৭৩১-২২০০৯৯,

Related All Post:

পোশাক শিল্পে চাকরির সুযোগ




Related All Subject (Many post in one subject): 


Tuesday, January 4, 2011

গার্মেন্ট শিল্পের আকাশে কালো মেঘ শ্রমিক অসন-োষ, কারখানা ভাংচুর, আগুন

গার্মেন্ট শিল্পের আকাশে কালো মেঘ শ্রমিক অসন-োষ, কারখানা ভাংচুর, আগুন

আরএইচ কৌশিক


এখন পর্যন- আমাদের রপ্তানির এককভাবে বড় সাফল্য মূলত পোশাক খাতই। অর্থনীতি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে বড় সম্ভাবনার ক্ষেত্র অনেকখানি তৈরিই হয়ে আছে। সামাজিক খাতের সূচকগুলোতে আমরা সমপর্যায়ের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়েছি। বলা যায়, এসব সম্ভাবনা নিয়েই হাজির হয়েছে বাংলাদেশের দুয়ারে এ গার্মেন্ট শিল্পের জন্যই। কিন্তু গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিক অসন-োষ, ভাঙচুরসহ আগুন লাগার ঘটনা এ খাতের উদ্যোক্তাসহ সচেতন সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। নৈরাজ্যকর এসব ঘটনার সঠিক কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এসব কারণে সম্ভাবনার এ খাতের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটিই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

স্বাধীনতার পর দেশে দ্রুত বিকাশমান শিল্পের মধ্যে গার্মেন্ট অন্যতম। ১৯৭৮ সালে ৮ লাখ টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি বর্তমানে ৯০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রত্যক্ষভাবে ৪০ লাখ লোক কাজ করছেন। পরোক্ষভাবে কাজ করছেন এমন সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। তিলে তিলে গড়ে ওঠা এ শিল্প খাত জিডিপিতে ১৪ শতাংশ অবদান রাখছে। আমাদের জাতীয় রফতানি আয়ের সিংহভাগই আসে এ খাত থেকে। গত বছর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা মুনাফার ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকাই এ খাতের অবদান।

বিজিএমইএ'র তথ্যমতে, ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে পোশাক খাতের রফতানি আয় ছিল ৩১ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার, যা মোট রফতানি আয়ের মাত্র ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে এ খাতের রফতানি আয় বেড়ে হয় ২৯৮ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার, যা তখনকার দেশের মোট রফতানি আয়ের ২৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০০৯-১০) এ খাতের রফতানি আয় ১২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে, যা হবে মোট রফতানি আয়ের ৭৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কেটে যাওয়ার পর ক্রমেই বাড়ছিল রফতানি আয়। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বাজার। তবে সামপ্রতিক সময়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে দেশের পোশাক খাত। রফতানি অর্ডার পাওয়া গেলেও গ্যাস-বিদু্যৎ সংকট ও শ্রমিক অসন-োষের কারণে সেগুলো ধরা যাচ্ছে না। রফতানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি) থেকে জানা গেছে, ২০০৯-১০ মোট রফতানির লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৭৯ দশমিক ৪৬ ভাগই ধরা হয়েছে পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে ওভেন গার্মেন্টের জন্য টার্গেট ধরা হয়েছে ৬৬৮ কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৩ শতাংশ। নিটওয়্যার রফতানিতে টার্গেট ধরা হয়েছে ৭২৯ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার ডলারের। প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

পোশাক শিল্পের আন-র্জাতিক অঙ্গনের বড় বড় যেসব কোম্পানি এতদিন অন্যদেশে তাদের অফিস বা অন্য কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে (বায়িং হাউস) বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনত, তারাও এখন সরাসরি এখানে আসছে। এতে করে বাংলাদেশ পোশাক বিক্রি করে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি মূল্য পাবে বলে মনে করছে এ খাতের উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ও মানসম্পন্ন তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের। খুবই মানসম্পন্ন কাপড় কিনে বিক্রি করে জার্মানির অ্যাডি বায়ার, এস অলিভার, স্পিরিট, আমেরিকার ডিকেএনওয়াই, কোল, টমি হিল ফিগার। অ্যাডি বায়ার শ্রীলঙ্কা থেকে চলে এসেছে বাংলাদেশে। কাজ দিয়েছে দেশের অন্যতম একটি পোশাক শিল্পকে। ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে জাপানেও বাংলাদেশের বড় বাজার তৈরির বেশ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা দেখেছি বারবার একইভাবে সাবধানতার কথা, যথাযথ নিরাপত্তার কথা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কথা, শ্রমিকের জানমালের নিরাপত্তার কথা বলা হলেও তার কোনো কিছুই বাস-বায়ন হয়নি। কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। আমাদের জাতীর স্বভাবসুলভ চরিত্র হিসেবেই ঘটনা ঘটার সপ্তাহ খানিক উচ্চবাচ্য করলেও পরে তা বেমালুম ভুলে যাই। শ্রমিক অস্থিরতা ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন লাগাটা এখন এ খাতে ভয়াবহ আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন গার্মেন্টে অগি্নকাণ্ডের পর হতাহতের ঘটনা তদন-ে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনগুলোতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে কারখানা তৈরি করা, দুর্ঘটনার সময় জরুরি অবতরণের জন্য পর্যাপ্ত বিকল্প সিঁড়ি না রাখা, সিঁড়ির মুখে লোহার গেটে তালা লাগানো থাকায় অগি্নকাণ্ডের সময় শ্রমিকরা বের হতে না পারা এবং বস-া, পোশাক ও আবর্জনা রেখে সিঁড়ির প্রবেশপথ বন্ধ করে রাখা ও অগি্ননির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এছাড়া কারখানায় দরজা খোলা রাখার ব্যাপারে সরকার, বায়ার এবং বিভিন্ন তদন-কারী দলের পক্ষে বারবার সাবধান করার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ শিল্পের সাথে জড়িতরা বলছেন, সামান্য কিছু সুতা-বোতাম চুরি ভয়ে কারখানার সব দরজা শেকল দিয়ে তালা মারা থাকে। দুর্ঘটনার সময় সেই তালার চাবিধারী দারোয়ান পালিয়ে যায়, ফলে আগুন লাগলে বা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে জীবন বাঁচানোর জন্য শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হতে পারে না। এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে যাওয়ার গেটও থাকে বন্ধ। অনেক ভবনের বাইরে দিয়ে ফায়ার স্কেপ সিঁড়ি থাকে না। মানবিক বিষয়কে উপেক্ষা করে শুধু ব্যবসায়িক বিষয় চিন-া করা হয়। যা শুনলে যে কারো গা শিউরে উঠবে। আগুন লাগার কারণ হিসেবে অনেকেই এমন প্রমাণ পেয়েছেন যে, ইন্সু্যরেন্স ক্লেইম, স্টক লট ক্লিয়ারসহ আরো ৩-৪ ধরনের কার্যকারণে এ আগুন লাগে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এবং গার্মেন্ট মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র দেয়া তথ্যে জানা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে এ শিল্পে আগুনে ৭০০ বেশি শ্রমিকের মৃতু্য হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে ঢাকাসহ সারাদেশে ১২ হাজার ১৮২টি অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে শুধু গার্মেন্ট শিল্পেই ২৯৩টি অগি্নকাণ্ড ঘটে। সরকারি হিসাবে এতে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি টাকা। আর ২০০৮ থেকে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন- মোট অগি্নকাণ্ড ঘটে ১৪ হাজার ৫৫৩টি, আগুনে পুড়ে মারা যায় ৪১৬ জন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকা। বেসরকারি আরেক হিসাবে বলা হয়, ২০ বছরে গার্মেন্ট শিল্পে অগি্নকাণ্ডে ৫০০ শ্রমিক মারা গেছে। ১৯৯০ সালে দেশে প্রথমবার মিরপুরে গার্মেন্টস শিল্পে অগি্নকাণ্ড ঘটে। এতে পুড়ে মারা যায় ৩২ জন। সেই থেকে শুরু করে একের পর এক অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।
Source: Daily Ittefaq, 25 dec-2010


Some Subject (Many post in one subject):