Wednesday, November 14, 2012

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বাজার হচ্ছে চীন

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বাজার হচ্ছে চীন


চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ব্যাপক। প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে এ ঘাটতি। কারণ বাংলাদেশ চীন থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করলেও বিপরীতে চীনে তার রপ্তানি খুব সামান্য। চীনের রয়েছে বিস্তৃত উত্পাদন ক্ষেত্র আর বিশাল শিল্প-ভিত্তি। সে তুলনায় বাংলাদেশের পণ্য, বিশেষ করে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা খুব সামান্য। তাই বাংলাদেশ চীন থেকে সুঁই-সুতো থেকে শুরু করে মিলিটারি হার্ডওয়্যার পর্যন্ত হাজার হাজার ধরনের পণ্য আমদানি করে। কিন্তু চীনে দেশটি রপ্তানি করে কেবল হিমায়িত মত্স্য, পাট ও তৈরি পোশাক; তাও সামান্য পরিমাণে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে চীন বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্যকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিলেও অবস্থার এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো উন্নতি হয় নি। কারণ সেসব পণ্যের বেশিরভাগই চীনেও তৈরি হয়। তবে সম্প্রতি বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাককে ঘিরে। চীন নিজেও তৈরি-পোশাকের একটা বড় উত্পাদক দেশ হলেও শ্রমিকের মজুরি ব্যাপভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে শ্রমঘন এ খাতের উত্পাদন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তাই চীনের ব্যবসায়ীরা এখন নজর রাখতে শুরু করেছে স্বল্পমূল্যের বাংলাদেশি তৈরি পোশাক খাতের দিকে।
বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য 'চায়না ন্যাশনাল গার্মেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিএনজিএ)'-এর আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করছে। ওই দলের প্রধান এবং সমিতির সহ-সভাপতি ফেং দেহু বলছিলেন, চীনের পোশাকশিল্পের উত্পাদনের বার্ষিক আকার বছরে ৩০ হাজার কোটি ডলারের। এর ৮২ শতাংশ দেশীয় বাজারে বিক্রি হয়। এসব তথ্য উল্লেখ করে চীনের তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব এবং শিগগিরই চীন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার হয়ে উঠবে।
সফর সম্পর্কে জানাতে চীনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সেখানেই এসব আশার কথা শোনান ফেং দেহু।
চীনের প্রতিনিধিদলটি এমন সময় তৈরি পোশাকের বিষয়ে সম্ভাবনার কথা শোনালেন, যখন বিশ্বমন্দা ও ঋণসংকটে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে, ক্রেতারা কার্যাদেশ বাতিল করছেন।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ইতোমধ্যে চীনে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার-সুবিধা পেয়েছে। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানিও বাড়ছে। ২০১১-১২ সালে চীনে ১০ কোটি ২০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
ফেং দেহু বলেন, তারা যতটুকু আশা করেছিলেন পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ তার চেয়েও বেশি উন্নতি করেছে। বাংলাদেশের শিল্প-মালিকেরা কম খরচে অনেক ভালো পণ্য তৈরি করতে পারে।
চীনে একটি বড় ব্র্যান্ডের একজন প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক মানের দিক দিয়ে ভালো এবং দামেও কম। আগামী কয়েক মাসে আমরা বাংলাদেশে অর্ডারের পরিমাণ বাড়াব। চীনের স্যুট তৈরির একটি নামী প্রতিষ্ঠানের আরেকজন প্রতিনিধি জানান, তাঁরা এ দেশে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন।
বিজিএমইএ বলছে, মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় চীন তাদের পোশাকশিল্প অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নিতে চাইছে। তারা বাংলাদেশে এলে সেটা দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে।
সমিতির সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ৮৭ শতাংশই এখনো যায় উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে। এ খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য এটা বেশ ঝুঁকির। এ অবস্থায় ১৩০ কোটি লোকের দেশের চীন বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় বাজার। তিনি বলেন, চীনে রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়টি নির্ভর করছে বাংলাদেশ কতটা দক্ষতার সঙ্গে পোশাক তৈরি করতে পারে তার ওপর।
শুধু বেসরকারি খাত নয়, সরকারও খুব উদ্যোগী চীনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে। বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের বলছিলেনে, চীন বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বাজার। চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ কিংবা এ দেশ থেকে আমদানি করতে চাইলে সরকার তাঁদের সব ধরনের সুবিধা দেবে।

No comments:

Post a Comment