গার্মেন্টসের ফেলে দেয়া টুকরো কাপড় (ঝুট) ফেলনা নয়। টুকরো কাপড় দিয়ে তৈরি করা যায় রকমারি পোশাক। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মিনি গার্মেন্টস। ছোট ছোট এসব কারখানায় মূলতঃ শিশুদের পোশাকই তৈরি করা হয়।
লালমনিরহাটেও এমন একটি কারখানা গড়ে উঠেছে যেখানে শুধু শিশুদের পোশাকই নয়, তৈরি করা হচ্ছে এক ধরণের কম্বল, যা শীতকালে স্বল্প আয়ের মানুষদের ভরসা হয়ে উঠেছে। আর এ কারখানায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু অসহায় দরিদ্র নারীর।
লালমনিরহাটের পৌর মার্কেটে যিনি এ অঞ্চলের প্রথম ও একমাত্র মিনি গার্মেন্টসটি গড়ে তুলেছেন তার নাম আতাউর রহমান। তার পেশাগত জীবন কেটেছে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে । তবে বর্তমানে যা করছেন তাতেই তিনি স্থিতি হতে চান। সেই সঙ্গে দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদান ও স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে কম মূল্যে কম্বল ও শিশুদের পোশাক সরবরাহ করে তৃপ্তি পেতে চান।
আতাউর রহমান জানান, তিনি লালমনিরহাট শহরের জনপ্রিয় একটি টেইলারিং শপে প্রায় এক যুগ কাজ করে উন্নত জীবিকা ও ভাগ্য অন্বেষণে ঢাকায় চলে নিয়েছিলেন। ঢাকায় তিনি ম্যানুয়েল মেশিন দিয়ে এমব্রয়ডারি মাস্টার হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় ২০ বছর। শুরুতে বেশ ভালো করলেও মাঝপথে থমকে যেতে হয় তাকে। গার্মেন্টস সেক্টরে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ম্যানুয়েল মেশিনের কাজের চাহিদা কমে যায়। ফলে তার ১২টি এমব্রয়ডারি মেশিন থাকা সত্ত্বেও
সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। কম্পিউটারচালিত এমব্রয়ডারি মেশিন কিনতে যে প্রচুর টাকার প্রয়োজন তাও সংগ্রহ করতে পারছিলেন না। ফলে এ কাজে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে ও খাপ খাওয়াতে না পেরে তিনি ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। কম্পিউটারচালিত এমব্রয়ডারি মেশিন কিনতে যে প্রচুর টাকার প্রয়োজন তাও সংগ্রহ করতে পারছিলেন না। ফলে এ কাজে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে ও খাপ খাওয়াতে না পেরে তিনি ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
তবে দমে যাননি আতাউর বললেন, নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করি। লালমনিরহাটে কোন গার্মেন্টস না থাকায় আমার ১২টি মেশিন দিয়েই ছোটখাট একটা কারখানা গড়ে তুলি।
আতাউর তার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘মাস্টার বুটিক এন্ড এমব্রয়ডারি সেন্টার’। এখানে বর্তমানে ১১ জন দুস্থ নারী শ্রমিক কাজ করছেন।
কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, নানা রংয়ের টুকরো কাপড় জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শিশুদের জামা, পায়জামাসহ নানা ধরণের পোশাক। তৈরি হওয়ার পর বুঝাই যায় না, রঙ্গিন পোশাকটি গার্মেন্টসের ফেলে দেয়া ছাঁট কাপড় (টুকরো) দিয়ে তৈরি। অন্যদিকে দেখা গেল কম্বল তৈরি হচ্ছে। টুকরো কাপড়ে কম্বল বানানো হলেও তা বুঝার উপায় নেই।
জানা গেছে, এসব টুকরো কাপড় ঢাকা থেকে কেজি হিসেবে কিনে নিয়ে আসা হয়। প্রতি কেজির দাম দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা। এ ছাড়া দোকানে বিক্রির পর থান কাপড়ের পরিত্যক্ত অংশও কিনে আনা হয় পোশাক বা কম্বলে ব্যবহারের জন্য।
এই মিনি গার্মেন্টসের মালিক মো. আতাউর আরো বলেন, এ কাজটি আমি শুধু ব্যবসার জন্যই করছি না। ফেলে দেয়া ঝুট কাপড় থেকে পোশাক বা কম্বল তৈরিতে একটা আনন্দও আছে। আর আমি এসব বিক্রি করছি কমদামে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে। দরিদ্র শিশুরা রঙ্গিন পোশাক পেয়ে আনন্দ পায়। এ ছাড়া এখানে আমি ১১ জন দুস্থ নারীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পেরেছি। আর এখানকার তৈরি পোশাক ফেরিওয়ালারা কিনে নিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে আয়-উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছে।
এদিকে অল্প দামে এখানকার কম্বল পেয়ে স্বল্প আয়ের মানুষজনও খুশি। এ ধরণের কম্বলের বেশ চাহিদাও রয়েছে। বিশেষ করে শীতার্ত দরিদ্র মানুষেরা এ কম্বল ব্যবহার করে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। এখানকার একজন শ্রমিক জানান, এবারের শীতে ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ হিসেবে দেয়ার জন্য অনেকেই এখান থেকে কম্বল নিয়ে গেছেন।
Some Bangladeshi Garments Website: