মহিলা অঙ্গন প্রতিবেদক
সবুজ পাহাড়ে মিনি গার্মেন্টস সৃষ্টিতে তাঁতের সাথে চলবে সেলাই মেশিন। চারদিকে পাহাড়। সবুজ আর সবুজ। আর এ সবুজ স্থানটি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার মধুপুর চা-বাগান ঘেঁষা বনবিভাগের পুটিজুড়ি বনবিট এলাকায়। নাম কালিগজিয়া। এর ভেতরে আদিবাসীদের বসবাস। তাদের এ বসবাসের স্থানটিকে বলা হয় ত্রিপুরা পুঞ্জি। যুগ যুগ ধরে এ পুঞ্জিতে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার বসবাস করে জীবিকা নির্বাহ করছে। পুঞ্জির অনেক পুরুষ নানা ফসলের চাষাবাদে জড়িত। নারীরাও বসে নেই। তারা তাঁত ও সেলাই মেশিন দিয়ে কেউ কেউ তৈরি করছে বাটিক শাড়ি আবার কেউ অন্য জামা-কাপড়। আদিবাসীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে তাঁতের পাশাপাশি ৫টি সেলাই মেশিন ও ৮০ হাজার টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরী। আদিবাসী নারীরা নিজস্ব পদ্ধতিতে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে তৈরি করে যাচ্ছে নানা ধরনের জামা ও শাড়ি। এসব জামা-কাপড় বিক্রিও হচ্ছে। একটু প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, তাহলে তারা এখানে মিনি গার্মেন্টস সৃষ্টি করতে পারবে। বিষয়টি মাথায় আসে হবিগঞ্জ-সিলেট জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর। তাই তিনি অনেক চেষ্টা করে যুব উন্নয়নের মাধ্যমে এ পুঞ্জিতে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। সরকারি বরাদ্দে ১৫ দিনব্যাপী পুঞ্জির নিকটবর্তী কালিগজিয়া স্কুলে পুঞ্জির আদিবাসী ২০ জন নারীকে নিয়ে সেলাই বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণে এসব নারীরা বলেন, ‘আমরা পাহাড়ে নানাভাবে বঞ্চিত ছিলাম।
এ প্রশিক্ষণ যেমন আমাদের সম্মানিত করেছে, তেমনি কর্মসংস্থানের পথ বের করে দিয়েছে। আমরা এ প্রশিক্ষণ নিয়ে এ পাহাড়েই মিনি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করব। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন কেয়া চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দিয়ে আমার কাজ শেষ নয়, তাদের (আদিবাসী নারীদের) জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দেব।’ কেয়া চৌধুরী তাদের ২০ জনের মধ্য থেকে প্রথম পর্যায়ে শিল্পী রানী দেববর্মা, স্বপ্না রানী দেববর্মা, স্বপ্না দেববর্মা, মিনুকা দেব বর্মার প্রত্যেককে ২০ হাজার করে ৮০ হাজার টাকার চেক ও ৪টি সেলাই মেশিন ছাড়াও অপর এক আদিবাসী নারীকে একটি সেলাই মেশিন প্রদান করেন। এ ৫ নারীর মাধ্যমে অন্যরা কাজ করে এ পাহাড়ে গড়ে তুলবে মিনি গার্মেন্টস। সাংসদ কেয়া চৌধুরী তাদেরকে পরামর্শ দেন, এখানে নারী কল্যাণ সমিতি গঠন করার জন্য। এ সমিতির মাধ্যমে তাদের তৈরি হবে কর্মসংস্থান। তিনি বলেন ‘এখানের তৈরি কাপড় ব্যাপকভাবে বাজারজাত হলে যেমন করে আদিবাসীরা উপকৃত হবে, তেমনি দেশও এগিয়ে যাবে। এখানের তৈরি কাপড় যাবে বাইরের দেশেও। আদিবাসী নারীরা জানান, যুগ যুগ ধরে তারা এ পাহাড়ে বসবাস করে তাঁত দিয়ে নানা ধরনের জামা-কাপড় তৈরি করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাকি কাপড় বিক্রি করে দিচ্ছে। তাঁতগুলো পুরনো হয়ে গেলেও তারা এ পেশাকে ধরে রেখেছে। এখন এ শিল্পকে আরো এগিয়ে নেবে প্রাপ্ত ঋণের টাকা ও সেলাই মেশিনগুলো।
No comments:
Post a Comment