খালিদ হাসান মোর্শেদ, গাইবান্ধা করেসপন্ডেন্ট॥ গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের যমুনা নদী বেষ্টিত প্রত্যন্ত চরের গ্রাম গলনা। যোগাযোগ বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া গ্রামের ২০ জন প্রান্তিক নারীর সমন্বিত প্রচেষ্টা আর অক্লান্ত শ্রমের ফসল গলনা মিনি গার্মেন্টস সমবায় সমিতি। যা এখন এই চরাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আর বঞ্চিত নারীদের ঐক্যবদ্ধ আত্মনির্ভরতা আর কর্মসংস্থানের অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
নদী বেষ্টিত এই গলনা ছ্ট্টো একটি গ্রাম যেখানে ২শ’ পরিবারের মাত্র ৯শ’ লোকের বসবাস। এর মধ্যে শতকারা ৫২ ভাগ নারী। সনাতন সামাজিক রীতিনীতি নির্ভর কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই গ্রামীণ সমাজে নারীরা অবহেলিত নির্যাতিত। দারিদ্র্য যেখানে মানুষের জীবন যাপনকে দু:সহ এবং কষ্টসাধ্য করে তুলেছে। সেই গ্রামের নারীদের ভাগ্যের উন্নয়নের সূত্রপাত হয় ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসকেএস ফাউণ্ডেশনের উদ্যোগে চরাঞ্চলের অবহেলিত নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অক্সফ্যামের সহযোগিতায় রি-কল প্রকল্পের কার্যক্রমের মাধ্যমে।
প্রকল্পের আওতায় নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে ২০ জন নারীকে মিনি গার্মেন্টস বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নারীরা গলনা মিনি গার্মেন্টস সমবায় সমিতি গঠন করে।
অত:পর উপকরণ, কাপড় এবং প্রয়োজনীয় মেশিন ক্রয়ের জন্য প্রকলেÍ আওতায় ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ঋণ প্রাপ্ত হয়।
এই থেকেই শুরু আত্মনির্ভরতার পথে এগিয়ে চলা। রুক্ষ্ম ধূসর বালুময় চরে শুরু হয় মিনি গার্মেন্টস এর উৎপাদন। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ২০ জন নারী তাদের সহযোগি শ্রমিকদের নিয়ে শিশুদের পোশাক, মেয়েদের জামা, ব্লাউজ, পেটিকোটসহ অন্যান্য পোশাক তৈরি শুরু করে। রি-কল প্রকল্পের সহযোগিতায় উৎপাদিত এসব পোশাকের ক্রেতাও জুটে যায়।
ফলে গলনার চরের নারীদের উৎপাদিত উন্নতমানের এবং স্বল্প মূল্যের পোশাক এখন বিক্রয় হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকায়। এছাড়া জেলার ফুলছড়ি, সাঘাটার বাদিয়াখালী, ভরতখালী, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জের চরাঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে। গলনা মিনি গার্মেন্টস সমবায় সমিতির সভাপতি রাশেদা বেগম বলেন, উৎপাদনে নিয়োজিত নারীরা যেমন এ থেকে লাভবান হতে শুরু করেছে।
পাশাপাশি এই মিনি গার্মেন্টসে কাজ করে গলনা গ্রামের ৭৫ জন নারী শ্রমিক প্রতিদিন ১শ’ ৫০ থেকে ২শ’ টাকা আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এ থেকে প্রত্যন্ত এ চরাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে কর্মের সংস্থান।