তৈরি পোশাকের বড় রপ্তানির হাতছানি
- মনজুর আহমেদ
রানা প্লাজা ধসের পর বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল, তা খানিকটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। এখন বড় এক সম্ভাবনার হাতছানি এসেছে এ শিল্পের জন্য।
সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন দিক থেকে। পোশাকশিল্পের ভবন সংস্কারে ক্রেতারা বড় অঙ্কের বাজেট করেছেন ও করছেন। এই বাজেটের অর্থ দিয়ে ত্রুটিমুক্ত করা হবে কারখানা ভবন। শ্রমিকদের দেওয়া হবে নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ। অগ্নিদুর্ঘটনা কমিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা কমানো যায়, সে জন্যও শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আধুনিক যন্ত্রপাতিতেও সজ্জিত করা হবে কারখানা।
ক্রেতারা তাদের শর্ত পরিপালন বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর হয়েছে। বছর ধরে ধরে তারা বাংলাদেশের পোশাক খাতের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়। ফলে কর্মপরিবেশ উন্নত না করে কোনো ‘ব্র্যান্ডে’র কাজ করা আর সম্ভব হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই দেশের পোশাক খাত আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন শিল্পমালিকেরা।
তাজরীন ফ্যাশনসের পর স্মার্ট ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড, তারপর রানা প্লাজা ধসে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি ক্রেতারাও তীব্র সমালোচনায় পড়ে। কিন্তু ক্রেতারাই বাংলাদেশের পোশাক খাতের ইতিবাচক দিক তুলে ধরছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা, ইউরোপ উভয় অঞ্চলের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানই এখন তাদের পোশাক তৈরি করে নেওয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেই গন্তব্য মনে করছে। শিল্পমালিকেরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো এত বড় শিল্পক্ষেত্র বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। অন্য কোনো দেশই প্রস্তুত নয় পোশাকের বাজার ধরতে। সস্তা শ্রম, ঘনবসতি, ধৈর্য ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করে যেতে চায় না কোনো দেশেরই বিপুলসংখ্যক বিশেষত নারী শ্রমিক। সেখানেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা।
সম্ভাবনা যেভাবে: মাঝখানে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু রপ্তানির কাজ ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে চলে যাচ্ছিল। ভারতও কিছুটা তৈরি হতে শুরু করেছিল। কিন্তু বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠী, সস্তা শ্রম, শ্রমিকের সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা, শিল্পের বিরাট স্থাপনা ও স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে পাওয়া শুল্কসুবিধা এগিয়ে নিয়েছে এ দেশকে।
রানা প্লাজা ধসের পর আমেরিকাতে ভোক্তারা এ দেশের পণ্য বর্জনের অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ তৈরি করেছে ভোক্তা ও শ্রমিক সংঘ। ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এককাট্টা হয়েছে। ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেছে ৮০টি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যেকে বছরে পাঁচ লাখ ডলার করে দেবে। ফলে পাঁচ বছরে এদের কাছ থেকে আসবে ২০ কোটি ডলার। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে ইউরোপীয় ক্রেতা প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে গেছে। আরও আছে নর্থ আমেরিকান অ্যালায়েন্স নামে উত্তর আমেরিকার ১৫ ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান, ইউরোপ ও আইএলওর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা চুক্তি ‘কমপ্যাক্ট’। আছে আমেরিকায় জিএসপি বিষয়ে বেশ কিছু পালনীয় শর্ত। এসব শর্ত পালনে ডিএফআইডি, জাইকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নও বড় ধরনের তহবিল তৈরি করেছে ও করছে। বাংলাদেশের শিল্প খাতকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতেই এসব শর্ত ও সহায়তা।
সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম থেকে তাদের চেষ্টা ছিল বিভিন্ন ক্রেতা ও দেশের যে ভিন্ন ভিন্ন শর্ত, তা অভিন্ন শর্তে আনা। আলোচনায় আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যার মধ্যে আমেরিকাতে জিএসপিও থাকবে, আবার আইএলওর শর্তও পালন হবে।’ তিনি বলেন, সম্ভাবনা তো আছেই, তবে প্রথম দু-এক বছর কিছুটা সমস্যা হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য।
বড় শিল্পগুলো তৈরি হচ্ছে: এনভয় দেশের পোশাক খাতের পরিচিত ও বড় শিল্পগোষ্ঠী। ময়মনসিংহের ভালুকাতে ৩২ বিঘা জমির ওপর নতুন একতলার কারখানা তৈরি করছে। এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বখ্যাত ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের কাজ পেতে হলে এখন এমন অনেক শর্ত পালন করতে হবে। একতলার ওপরে ভবন হলে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা কমে আসবে। তিনি বলেন, শিল্পমালিকেরা নিজেদের প্রয়োজনেই ক্রেতাদের এসব শর্ত পালন করবেন। তবে একটা ধাক্কা লাগতে পারে পোশাক খাতে। কিন্তু নতুনেরা এগিয়ে যাবে বলে মত দেন তৈরি পোশাক মালিক সমিতির সাবেক এই সভাপতি।
এনভয়ের মতো ভেতরে ভেতরে দেশের বড় পোশাক কারখানাগুলো একধরনের প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে বলে জানা যায়। এসব শিল্পমালিক মনে করেন, কারখানা পরিবেশ দ্রুত উন্নতির তাগিদ যেমন থাকতে হবে, তেমনি শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে তাঁদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে হবে বাংলাদেশকে।
ছোট কারখানা বন্ধ হতে পারে: তবে ক্রেতাদের এসব শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশের ছোট ও মাঝারি পর্যায়ের বেশ কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন মালিক সমিতির নেতারা।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, অবকাঠামো ও সব ধরনের শর্ত পালন না করতে পেরে ছোট ও মাঝারি কিছু কারখানা বন্ধ হতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে হলে ক্রেতাদের এসব শর্ত মানার কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র: প্রথম আলো
Some Subject (Many post in one subject):
- তৈরি পোশাকের বাজার (6 post in one subject)
- গার্মেন্টস স্টক লট (4 post in one subject)
- গার্মেন্টনির্ভর পেশা (4 post in one subject)
- বায়িং ব্যবসা (2 post in one subject)
- গার্মেন্টস শিক্ষা-প্রশিক্ষণ (3 post in one subject)
- বায়িং ব্যবসা (2 post in one subject)
- ব্যবসাঃ (2 post in one subject)
Some Bangladeshi Garments Website: