Thursday, October 10, 2013

তৈরি পোশাকের বড় রপ্তানির হাতছানি

তৈরি পোশাকের বড় রপ্তানির হাতছানি

- মনজুর আহমেদ


রানা প্লাজা ধসের পর বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল, তা খানিকটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। এখন বড় এক সম্ভাবনার হাতছানি এসেছে এ শিল্পের জন্য।

সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন দিক থেকে। পোশাকশিল্পের ভবন সংস্কারে ক্রেতারা বড় অঙ্কের বাজেট করেছেন ও করছেন। এই বাজেটের অর্থ দিয়ে ত্রুটিমুক্ত করা হবে কারখানা ভবন। শ্রমিকদের দেওয়া হবে নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ। অগ্নিদুর্ঘটনা কমিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা কমানো যায়, সে জন্যও শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আধুনিক যন্ত্রপাতিতেও সজ্জিত করা হবে কারখানা।
ক্রেতারা তাদের শর্ত পরিপালন বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি তৎপর হয়েছে। বছর ধরে ধরে তারা বাংলাদেশের পোশাক খাতের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়। ফলে কর্মপরিবেশ উন্নত না করে কোনো ‘ব্র্যান্ডে’র কাজ করা আর সম্ভব হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই দেশের পোশাক খাত আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন শিল্পমালিকেরা।
তাজরীন ফ্যাশনসের পর স্মার্ট ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড, তারপর রানা প্লাজা ধসে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি ক্রেতারাও তীব্র সমালোচনায় পড়ে। কিন্তু ক্রেতারাই বাংলাদেশের পোশাক খাতের ইতিবাচক দিক তুলে ধরছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা, ইউরোপ উভয় অঞ্চলের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানই এখন তাদের পোশাক তৈরি করে নেওয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেই গন্তব্য মনে করছে। শিল্পমালিকেরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো এত বড় শিল্পক্ষেত্র বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। অন্য কোনো দেশই প্রস্তুত নয় পোশাকের বাজার ধরতে। সস্তা শ্রম, ঘনবসতি, ধৈর্য ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করে যেতে চায় না কোনো দেশেরই বিপুলসংখ্যক বিশেষত নারী শ্রমিক। সেখানেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা।
সম্ভাবনা যেভাবে: মাঝখানে বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু রপ্তানির কাজ ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে চলে যাচ্ছিল। ভারতও কিছুটা তৈরি হতে শুরু করেছিল। কিন্তু বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠী, সস্তা শ্রম, শ্রমিকের সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা, শিল্পের বিরাট স্থাপনা ও স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে পাওয়া শুল্কসুবিধা এগিয়ে নিয়েছে এ দেশকে।
রানা প্লাজা ধসের পর আমেরিকাতে ভোক্তারা এ দেশের পণ্য বর্জনের অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ তৈরি করেছে ভোক্তা ও শ্রমিক সংঘ। ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এককাট্টা হয়েছে। ‘অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করেছে ৮০টি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যেকে বছরে পাঁচ লাখ ডলার করে দেবে। ফলে পাঁচ বছরে এদের কাছ থেকে আসবে ২০ কোটি ডলার। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে ইউরোপীয় ক্রেতা প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে গেছে। আরও আছে নর্থ আমেরিকান অ্যালায়েন্স নামে উত্তর আমেরিকার ১৫ ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান, ইউরোপ ও আইএলওর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা চুক্তি ‘কমপ্যাক্ট’। আছে আমেরিকায় জিএসপি বিষয়ে বেশ কিছু পালনীয় শর্ত। এসব শর্ত পালনে ডিএফআইডি, জাইকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নও বড় ধরনের তহবিল তৈরি করেছে ও করছে। বাংলাদেশের শিল্প খাতকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতেই এসব শর্ত ও সহায়তা।
সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম থেকে তাদের চেষ্টা ছিল বিভিন্ন ক্রেতা ও দেশের যে ভিন্ন ভিন্ন শর্ত, তা অভিন্ন শর্তে আনা। আলোচনায় আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যার মধ্যে আমেরিকাতে জিএসপিও থাকবে, আবার আইএলওর শর্তও পালন হবে।’ তিনি বলেন, সম্ভাবনা তো আছেই, তবে প্রথম দু-এক বছর কিছুটা সমস্যা হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য।
বড় শিল্পগুলো তৈরি হচ্ছে: এনভয় দেশের পোশাক খাতের পরিচিত ও বড় শিল্পগোষ্ঠী। ময়মনসিংহের ভালুকাতে ৩২ বিঘা জমির ওপর নতুন একতলার কারখানা তৈরি করছে। এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বখ্যাত ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের কাজ পেতে হলে এখন এমন অনেক শর্ত পালন করতে হবে। একতলার ওপরে ভবন হলে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনা কমে আসবে। তিনি বলেন, শিল্পমালিকেরা নিজেদের প্রয়োজনেই ক্রেতাদের এসব শর্ত পালন করবেন। তবে একটা ধাক্কা লাগতে পারে পোশাক খাতে। কিন্তু নতুনেরা এগিয়ে যাবে বলে মত দেন তৈরি পোশাক মালিক সমিতির সাবেক এই সভাপতি।
এনভয়ের মতো ভেতরে ভেতরে দেশের বড় পোশাক কারখানাগুলো একধরনের প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে বলে জানা যায়। এসব শিল্পমালিক মনে করেন, কারখানা পরিবেশ দ্রুত উন্নতির তাগিদ যেমন থাকতে হবে, তেমনি শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে তাঁদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে হবে বাংলাদেশকে।
ছোট কারখানা বন্ধ হতে পারে: তবে ক্রেতাদের এসব শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশের ছোট ও মাঝারি পর্যায়ের বেশ কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন মালিক সমিতির নেতারা।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, অবকাঠামো ও সব ধরনের শর্ত পালন না করতে পেরে ছোট ও মাঝারি কিছু কারখানা বন্ধ হতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে হলে ক্রেতাদের এসব শর্ত মানার কোনো বিকল্প নেই।

Sunday, October 6, 2013

মিনি গার্মেন্টস দিয়ে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত আশরাফুল

মিনি গার্মেন্টস দিয়ে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত আশরাফুল

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা : সাদুল্লাপুরে মিনি গার্মেন্টস দিয়ে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে আশরাফুল। সরেজমিনে জানা যায়, সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মরুয়াদহ গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৭) ২০০৪ সালে এইচ,এস,সি পাসের পর লেখাপড়ার পরিসমাপ্তি ঘটান। দীর্ঘদিন বেকার অবস্থায় ঘুরাফেরা করতে থাকে। এদিকে ঢাকায় তার এক আত্মীয় গার্মেন্টসে কাজ করেন। সে আশরাফুলকে ঢাকা থেকে কাপড় কিনে নিয়ে এসে সাদুল¬াপুরে মিনি গার্মেন্টস তৈরী করার উৎসাহ উদ্দীপনা জোগাতে থাকে। তার কথামতো ২০১০ সালে সাদুল্লাপুর বাজারের কাশারী পট্টি সংলগ্ন একটি ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু করে দেয় মিনি গার্মেন্টস। ঢাকার ইসলামপুর থেকে বিভিন্ন ধরনের রুল কাপড়, শার্ট তৈরীর পেষ্টিং বোর্ড, সাপেস্টার ক্লিপ, পিন চিপস বোতামসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি কিনে নিয়ে এসে এ গার্মেন্টসে পোশাক তৈরী করে কয়েক বছরের মধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। এদিকে তার মালামাল জেলাসহ নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া, পীরগঞ্জ, শঠিবাড়ী ও মিঠাপুকুরসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সেল্স ম্যানরা সরবরাহ করে আসছে। বর্তমানে মাসে ৩৫০০ পিস শার্ট বাজারে সরবরাহ  করছে। বর্তমানে বাজারের চাহিদা ৬০০০ পিস শার্ট কিন্তু সে অনুযায়ী মালামাল দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ঘরের পরিধি ছোট এবং আর্থিক কিছুটা অসংগতির কারণে দামী সেলাই মেশিনের অভাবে মাল উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। দর্জির কাজে পাওয়ার মেশিন, ঝিকঝাক মেশিন, ফিড অবদা মেশিন যদি এ গার্মেন্টসে থাকতো তাহলে আরও উন্নত মানের রেডিমেট পোশাক তৈরী করে আরও ব্যাপক সাড়া ফেলাতে পারতো। বর্তমানে তার গার্মেন্টসে কর্মচারী ৯ জন। তারা প্রতিদিন ৪/৫ শত টাকা জনপ্রতি আয় করছে। আর সেল্স ম্যানরা কমিশনের ভিত্তিতে ৮ থেকে ৯শত টাকা পর্যন্ত দিনে আয় করছে।
এই গার্মেন্টসের মালিক আশরাফুল মাসে সব খরচ বাদে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করে থাকে। এই গার্মেন্টসের মালিক আশরাফুল বলেন, সরকারি কিংবা বে-সরকারি সংস্থা এ মিনি গার্মেন্টসের দিকে আর্থিকভাবে একটু সহযোগিতার হাত বাড়ালে উন্নত মেশিনের মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্র তৈরী করে ৭০/৮০ জন বেকার যুব ছেলে-মেয়েদের নিজ এলাকায় আত্মকর্মসংস্থানের পথ সুগম হতো। তাদেরকে আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে ঢাকায় গিয়ে কাজ করতে হবে না।