Monday, November 22, 2010

গার্মেন্ট ও তাঁত শিল্প বিপর্যয়ের মুখে ব্যবসায়ীরা হতাশ

সুতার দাম বাড়ছে: গার্মেন্ট ও তাঁত শিল্প বিপর্যয়ের মুখে ব্যবসায়ীরা হতাশ

লাগামহীনভাবে বাড়ছে সুতার দাম। ফলে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে সুতার বাজার। গত এক সপ্তাহে প্রতি পাউন্ড সুতার দাম এক ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় গার্মেন্টসহ দেশীয় তাঁত শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারে সুতার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে স্পিনিং মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট সুতার বাজার অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটছে। স্পিনিং মিল মালিকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দাম বৃদ্ধি এবং গ্যাস বিদ্যুতের অসহনীয় সংকটের কারণে মিলগুলোতে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে দেশের বৃহত্তম সুতার পাইকারি বাজার নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজারে সুতার বেচা-কেনা থমকে আছে। সুতা ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট মালিক, ও স্পিনিং মিল মালিকসহ বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি বিসিকের নিউ মদিনা ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ আহসানউলাহ জানান, ঈদের আগে প্রতি পাউন্ড কাট (গার্মেন্টে ব্যবহৃত সুতা ) সুতা তিন দশমিক পঞ্চান্ন সেন্ট দিয়ে ক্রয় করেছিলেন। বর্তমানে সেই সুতা বাজারে বিক্রি হচ্ছে চার দশমিক ত্রিশ সেন্টে। এভাবে প্রতিদিন সকালে-বিকেলে সুতার দাম বাড়ছে। যার কারণে নিট গার্মেন্টগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি জানান, তার গার্মেন্টে এক লাখ ছাবি্বশ হাজার পিসের একটি অর্ডার প্রস্তুত করতে বর্তমানে সুতার দর বৃদ্ধির কারণে দশ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বিকেএমইএ'র পরিচালক মনসুর আহমেদ জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি পাউন্ড সুতা বিক্রি হয়েছে দুই দশমিক পঞ্চাশ সেন্টে। যা বর্তমানে প্রতি পাউন্ডে দুই ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। আকস্মিকভাবে সুতার দর বাড়ানোর জন্য স্পিনিং মিল মালিকদের কারসাজি অবিহিত করে তিনি বলেন, এর ফলে দেশের নিট গার্মেন্ট শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে। দেশের বেশির ভাগ নিট গার্মেন্ট মালিকের পক্ষেই বর্ধিত মূল্যে সুতা ক্রয় করে শিপমেন্ট করা সম্ভব নয়। অনেক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী দেশীয় সুতার দাম বেড়ে যাওয়ার গত এক মাস ধরে ভারত থেকে সুতা আমদানি শুরু করেছেন। বর্তমানে ভারত থেকে কাট সুতা প্রতি পাউন্ড তিন দশমিক পঞ্চাশ সেন্টে আনা যাচ্ছে। মনসুর আহমেদ জানান, ঈদের আগে ছোট ছোট গার্মেন্টগুলো সুতার এলসি বাইরে বিক্রি করে শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করেছেন। এ সব নিট গার্মেন্টগুলো এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।

বিকেএমইএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম জানান, সুতার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার কারণে বিকেএমইএ ইতোমধ্যে বিটিএমএ'র সঙ্গে সুতার বাজার দর নিয়ে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে যেভাবে সুতার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই যেসব নিট গার্মেন্ট অর্ডার নিয়েছেন তারা এ মুহূতে শিপমেন্ট করলে পুঁজি হারাতে হবে। বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দেশে স্পিনিং মিলগুলো সুতা সরবরাহ করতে পারছে না। বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা জানান, সুতার দর বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশীয় তাঁত শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সরকারিভাবে যদি সুতার বাজার মনিটরিং করা না হয় তাহলে দেশীয় কাপড়ের দাম বেড়ে যাবে। এবং বেশির ভাগ তাঁত শিল্প বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের টানবাজারের সুতা পট্টি ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সুতার ক্রেতা থাকলেও বিক্রেতার ঘরে সুতা পাওয়া যাচ্ছে না। সিরাজগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন জানান, সাধারণত রোজার মধ্যে দেশীয় তাঁত শিল্পে চাহিদার কারণে সুতার দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়। তবে এবার যেভাবে সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে তাঁতিদের পক্ষে সুতা ক্রয় করে কাপড় তৈরি করা সম্ভব হবে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দেশের নিট গার্মেন্ট এবং তাঁত শিল্পে ধস নেমে আসবে। এ জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

Source: Daily Sangbad


Some Subject (Many post in one subject):