Wednesday, April 23, 2014

বঙ্গবাজারে স্টক লটে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আধিপত্য



বঙ্গবাজারে স্টক লটে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আধিপত্য

গার্মেন্টসের শিপমেন্ট বাতিল সামান্য ত্রুটিযুক্ত অর্ডারগুলো স্টক হয়ে গেলে তা দেশের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী অপেক্ষাকৃত কমদামে কিনে আবারো বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। আবার স্টকের যেসব কাপড় রপ্তানি সম্ভব হয় না তা গুলি¯ত্মানের বঙ্গবাজারসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে চলে যায়। স্টক হয়ে যাওয়ার ফলে কারখানাগুলো যে বিশাল লোকসানের মুখোমুখি হয় তা এসব ব্যবাসায়ীর কারণে রক্ষা পায়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সাউথ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ এসব স্টক লটের ক্রেতা হলেও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশের স্টক লটের চাহিদা অনেক। প্রতিদিনই গার্মেন্টস স্টক থেকে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা থেকে কাপড়গুলো কিনে তা ভারতসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বেশি হওয়ায় দিন দিন তাদের আনোগোনা যেমন বেড়েছে তেমনি ভারতীয় বিশেষ করে বাংলাভাষি ভারতীয় ব্যাবসায়ীরা বঙ্গবাজারসহ আশে পাশের বাজারে দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছে। তাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়িরা খুশি হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা বাংলাদেশিদের ব্যবসা নষ্ট করতে শুরু করেছে।
বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ি আব্দুল জলিল বলেন, ভারতীয়রা যে কাপড় আগে আমাদের থেকে ক্রয় করতো এখন তারা সে কাপড় সরাসরি কারখানা থেকে কিনছে। বাংলাদেশের শ্রমিকের ঘামে যে কাপড় তৈরি হচ্ছে সে কাপড়ের লেবেল কেটে তারা মেড ইন ইনডিয়া লিখে অন্যান্য দেশে বিক্রি করছে। আবার বঙ্গবাজারে প্রতিদিনই বিদেশি খুচরা ক্রেতা আসে। ভারতীয়রা কৌশলে সম্পর্ক করে এসব ক্রেতাদের বাংলাদেশিদের থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় স্টক লটের ব্যবসায় পুরো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, বর্তমানে বঙ্গবাজার, নগরপ্লাজাসহ আশে পাশের মার্কেটগুলোতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু দোকান গড়ে উঠেছে। এখন এসব মার্কেটে প্রতিদিনই অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দেখা যায়।
আরিফ আহমেদ নামে বঙ্গবাজারের আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, যে কাপড় আমাদের রপ্তানি করার কথা তা রপ্তানি করছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের ব্যবসায় সব ধরণের সহযোগিতা করছে বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী। যদি এভাবে স্টক লটের ব্যবসায় ভারতীয়দের অধিপত্য প্রতিষ্ঠা পায় তাহলে এক সময় বাংলাদেশি স্টক লট ব্যবসায়ীরা হারিয়ে যাবে।
বিজিএমইএ পরিচালক সাঈদুল ইসলাম সাদি আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের স্টক লটের প্রতি ভারতীয়দের আগ্রহের বিষয়টি সবারই জানা আছে। কিন্তু তারা নিজেরাই স্টক লট কিনে তা ভারতের নামে রপ্তানি করছে এধরণের অভিযোগ বিজিএমইএ এখনো পায় নি। ভারতীয়রা ক্রেতা হয়ে আমাদের স্টক লটগুলো কিনে নিতে পারে। এখানকার বিদেশি ক্রেতা ধরতে তারা বাজারে কোনভাবেই প্রতিযোগিতা করতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএ সহ প্রশাসনের এখনই উদ্যোগ নেয়া দরকার।

Sunday, April 20, 2014

পোশাক শিল্পে শ্রমিকের কাজ করবে মেশিন

পোশাক শিল্পে শ্রমিকের কাজ করবে মেশিন


বাংলাদেশের সস্তা শ্রমের সুনাম বিশ্বব্যাপী। পণ্য তৈরিতে এদেশে শ্রমমূল্য নামমাত্র। এই সস্তা শ্রমকে পুঁজি করেই বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। নামিদামি ব্র্যান্ডগুলো এদেশের সস্তা শ্রমকে কাজে লাগিয়ে কমমূল্যে পোশাক তৈরি করছে। আর উচ্চমূল্যে বিক্রি করে ব্র্যান্ড সুবিধায় উচ্চ মুনাফা করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বস্তা শ্রমের সুনাম কতদিন টিকবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। রফতানিমুখী পোশাক শিল্পে একের পর এক শ্রমিক অসন্তোষ আর ট্রেড ইউনিয়নের ঝামেলা এড়াতে শুরু হয়েছে মেশিননির্ভর আধুনিক প্রযুক্তি। এতে একজন শ্রমিক হাতে এতদিনে যে কাজটি করতেন একই কাজ আরও সুচারুভাবে করে দেবে মেশিন। তবে আশংকার কথা হচ্ছে, এই প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়লে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রমিক আন্দোলন এড়াতে যন্ত্রনির্ভর হচ্ছে গার্মেন্ট। ম্যানুয়াল মেশিনের পরিবর্তে কম্পিউটারে চালিত জ্যাকর্ডি অটো মেশিন নিয়ে আসছে গার্মেন্ট মালিকরা। একজন শ্রমিকই এ ধরনের ৭টি চালাতে পারে। নিটওয়্যার খাতে এর প্রবণতা বেশি। মালিক পক্ষ বলছে, গার্মেন্ট কোনো দাতব্য ফাউন্ডেশন নয়। তারা টাকা দিয়ে ব্যবসা করছেন। যে কারণে কথায় কথায় ধর্মঘট এবং রাস্তা বন্ধ করে দেয়া তারা মানবেন না। আন্দোলন ঠেকাতে তাদের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে গার্মেন্টখাতে কর্মসংস্থান কমে আসবে। আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশে বড় ধরনের বেকার সমস্যা দেখা দেবে। 
সাধারণত গার্মেন্টে কয়েক ধরনের মেশিন ব্যবহার হয়। এরমধ্যে রয়েছে স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডায়িং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং টেস্টিং, ওয়াশিং এবং অ্যামব্রয়ডারি। বর্তমানে নিটিংয়ের জন্য ৯৫ শতাংশ গার্মেন্টে কম্পিউটার চালিত মেশিন নিয়ে আসা হচ্ছে। আর নতুন যারা  গার্মেন্ট খুলছে, তাদের শত ভাগ এই মেশিন নিয়ে আসছে। রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) সব কারখানায় এই মেশিন। মালিকরা বলছে নিটওয়্যারখাতে একটি মেশিনের দাম ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু জ্যাকার্ড মেশিনের দাম প্রায় ১৫ লাখ টাকা। একজন শ্রমিকই ৭টি পর্যন্ত মেশিন চালাতে পারে। কম্পিউটারে চালিত এ মেশিনে সুতা পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কাটে। সূত্র আরও জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে শ্রমিকদের আন্দোলনে গার্মেন্ট মালিকরা উদ্বিগ্ন। বড় কোনো কারখানা বন্ধ করে দিলে সমস্যায় পড়তে হয়। ফলে বেশি দাম দিয়ে এসব মেশিন কেনা সম্ভব হলে আন্দোলন এড়ানো যাবে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গার্মেন্টে প্রতি বছর সরকার অনেক ধরনের সহায়তা দেয়। অন্যান্য পণ্য আমদানিতে সরকারকে যে পরিমাণ শুল্ক দিতে হয়, গার্মেন্ট মেশিনারিজ এবং কাপড় আমদানিতে শুল্ক তার চেয়ে কম। এছাড়াও বিশ্ব মন্দার সময় এ খাতের রফতানি ধরে রাখতে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এর সব কিছুর উদ্দেশ্যে এখাতে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান। এরপরও শ্রমিকরা বেকার হলে সরকারের এতসব সহায়তা নিরর্থক হবে। এছাড়াও অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে ছোট কারখানাগুলো। কারণ এই মেশিন কেনার সমর্থ যাদের না আছে, ওই ছোট ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ প্রথম সহ-সভাপতি শহিদুল আজিম যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে নিটওয়্যার সব কারখানায় জ্যাকার্ড মেশিন আনা হচ্ছে। আর ওভেন গার্মেন্টের জন্য লিন ম্যানু ফ্যাকচারিং আসছে। তিনি বলেন, গার্মেন্ট মালিকদের এর বিকল্প নেই। কারণ শ্রমিকরা ইউনিয়ন করে কথায় কথায় কারখানা বন্ধ করে দেয়। ভাংচুর রাস্তা অবরোধ করে। যে কারণ এই মেশিন দিয়ে শ্রমিক কমানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ব্যবসা করছি। দাতব্য ফাউন্ডেশন নিয়ে বসিনি। তারমতে, এ মেশিনে খরচ কম, উৎপাদন বেশি এবং পণ্যের গুণগতমান ভালো।
গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। এটি উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, প্রযুক্তির আমরা বিরোধিতা করি না। তবে এমন প্রযুক্তি চাই না, যা মানুষের অধিকার নষ্ট করবে।